Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক

দেশে প্রথমবারের মতো মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালু করলো সরকার

16358 (গবাদিপশুর যেকোন সমস্যায় ফোন করুন)

“শেখ হাসিনার উপহার, প্রাণীর পাশেই ডাক্তার” এই স্লোগানকে ধারন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রান্তিক খামারিদের দোরগোড়ায় আধুনিক ও জরুরি প্রাণিচিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যে দেশে প্রথমবারের মতো মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালু করলো।

 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে মোট ৩৬০টি মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে আজ ৬১টি উপজেলায় মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক প্রদান করা হলো। এ উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাঙ্গন, কৃষি খামার সড়ক, ঢাকায় একটি মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।   

 

জনাব শ ম রেজাউল করিম এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকগুলো হস্তান্তর করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, সম্মানিত সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা।

 

মাননীয় মন্ত্রী জনাব শ ম রেজাউল করিম এমপি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, মানুষ অসুস্থ হলে যেমন এ্যাম্বুলেন্স লাগে, তেমনি পশুপাখির জন্য এই ভ্রাম্যমান প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিকের ব্যবস্থা করা হলো। মানুষকে সহজে বহন করে নেয়া যায়, কিন্তু অসুস্থ এবং বৃহৎ আকারের গবাদিপশু বহন করে হাসপাতালে নেয়া দুরুহ কাজ। তাই এই ভ্রাম্যমান প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিকে করে ডাক্তার ও চিকিৎসা যাবে রুগী তথা অসুস্থ প্রাণীর কাছে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, তৃষ্ণার্ত নয়, নদীই যাবে তৃষ্ণার্তের কাছে।

 

তিনি বলেন, মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক (Mobile Veterinary Clinic) বা ভ্রাম্যমান প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিক প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো দ্রুততম সময়ে খামারীদের দোরগোড়ায় জরুরি প্রাণিচিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া। ক্লিনিকগুলো দেখতে অনেকটা সাধারণ জিপ গাড়ি বা ডাবল ক্যাবিন পিকআপের মতো। এর দু’টি অংশ রয়েছে। গাড়ির সামনের অংশ চিকিৎসক ও তার সহকারির বসার জন্য এবং পেছনের অংশ অত্যাবশ্যক চিকিৎসা সামগ্রী, ওষুধ ইত্যাদি বহন করার জন্য।

 

মাননীয় মন্ত্রী বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একটা কেন্দ্রীয় টোল ফ্রি হটলাইন নাম্বার আছে, ১৬৩৫৮ । এখানে ফোন করে জরুরি সেবা চাইলে তা তৎক্ষণাত সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে একটি করে ডেডিকেটেড কর্পোরেট মোবাইল ফোন নাম্বার দেয়া আছে। সেখানে ফোন করেও জরুরি সেবা পাওয়া যাবে।

 

প্রত্যেক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা ভেটেরিনারি সার্জন শুধু জরুরি ফোন পেয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়ার কাজেই এ ক্লিনিকটি ব্যবহার করবেন না, বরং তারা এটি নিয়ে নিয়মিত স্ব স্ব উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল রুটিন করে এবং আগে থেকে জানান দিয়ে পরিদর্শন করবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

তিনি আরো বলেন, ভ্রাম্যমান প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিকগুলো জরুরি চিকিৎসা সেবা দেবার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের টিকা ও ওষুধ প্রদানের কাজেও ব্যবহৃত হবে। প্রাণিসম্পদের বিভিন্ন ভ্যালু চেইনের খামারিদের নিয়ে গঠিত প্রোডিউসার গ্রুপের সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান, কৃষক মাঠ স্কুল পরিচালনা, তাদের সভায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি কাজেও ভ্রাম্যমান প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিকগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

 

ভেটেরিনারি ক্লিনিক গ্রহণকারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাগণের উদ্দেশ্যে মাননীয় মন্ত্রী বলেন, ক্লিনিকগুলো নিয়ে দেশের খামারিদের পাশে দাঁড়ান। আর যেন কোন গবাদি পশুপাখি বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়। তিনি ক্লিনিকগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ এর রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি যত্নশীল হবার আহ্বান জানান।

 

বিশষ অতিথির বক্তব্যে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের সাহায্যে দ্রুত চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো যাবে এবং একসাথে অধিক সংখ্যক খামারি/খামার/প্রাণীর সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা যাবে। এর ফলে ভুল চিকিৎসা বা বিনা চিকিৎসায় গবাদিপশু মারা যাবার ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে। উন্নত জাতের গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, কবুতর, টার্কি ইত্যাদির খামার বৃদ্ধি পাবে। খামার ব্যবস্থাপনা, মানসম্পন্ন পশুখাদ্য, পশু পরিচর্যা, চিকিৎসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। এমনকি বাজারজাতকরণ ও দেশে তৈরি প্রাণিজাত খাদ্যের বাজার চাহিদা বৃদ্ধিতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 

আগে যেখানে চাষাবাদ আর দুধ, ডিমের প্রয়োজনে এবং অনেকটা শখের বশে গ্রামের বাড়ির উঠানের কোনে পশুপাখি লালন-পালন করা হতো, বর্তমানে সেখানে বৃহৎ পরিসরে এবং বাণিজ্যিকভাবে উন্নত জাতের গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি উৎপাদন ও বিপণনের যে ধারা সূচিত হয়েছে তার গতি এ ক্লিনিক প্রদানের ফলে বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 

বিশেষ অতিথি আরো বলেন, দেশে এ ক্লিনিক চালুর মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত ‘One Health’ অর্থাৎ মানুষ, প্রাণি ও পরিবেশের জন্য একই রকম সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পথে আমরা অনেকটা এগিয়ে যাবো।

 

সভাপতির বক্তব্যে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক ভ্যানে থাকা কোবো টুল বক্সের সাহায্যে গড়ে তোলা হবে প্রাণিসম্পদের তথ্য ও তার চিকিৎসা ডাটাবেজ যা পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রয়োজনে বিশেষকরে বিদেশে প্রাণিজ খাদ্য রপ্তানিসহ নানা কাজে সহায়ক হবে।

 

এতে করে কোন খামারি আর নিজেকে একা মনে করবেন না। তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। উন্নত জাতের পশুপালনে বা এখাতে বিনিয়োগে আগ্রহীর সংখ্যা বাড়বে। দেশ নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য তৈরি ও তা থেকে নানামুখী খাদ্যসামগ্রী উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

 

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জনাব মো. আব্দুর রহিম, প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব), প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প। মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের উপর একটি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের চীফ টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রব্বানী।

 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরামর্শক, প্রাণিসম্পদ খাতের বিজ্ঞানী-গবেষক, উদ্যোক্তা এবং মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক গ্রহণকারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।